• ক্যাটাগরি

  • ছবি ঘর

  • ফেসবুক সদস্য

  • Enter your email address to follow this blog and receive notifications of new posts by email.

    Join 1 other subscriber

সাঁওতাল বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল

ছবিতে ডান থেকে আবু সাঈদ খান, রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাশেদ খান মেনন, রবীন্দ্রনাথ সরেন, মিনু ম্রং, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মঙ্গল কুমার চাকমা, উজ্জ্বল আজিম

৩০ জুন মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের গৌরবময় ১৫৭ বছর উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে ২৮ জুন ২০১২ তারিখে সকাল ১০টায় এক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে ‘বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিচয়ের রাজনীতি: প্রাসঙ্গিক তথ্য ও ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল সুমন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন-এমপি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশহী সদর ২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ফজলে হোসেন বাদশা, তথ্য কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, গণঐক্যের আহ্বায়ক পংকজ ভট্টাচার্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর আহ্বায়ক মিনু ম্রং, দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, অক্সফাম প্রতনিধি উজ্জ্বল আজিম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি রেজওয়ানুল করিম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় ।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিধু-কানুদের নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহের মধ্য দিয়েই এই উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত হয়। অথচ ইতিহাসের পাতায় আদিবাসীরা উপেক্ষিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আদিবাসী দিবস পালন না করা প্রসঙ্গে সরকারী নির্দেশনার তীব্র সমালোচনা ও অবিলম্বে এই নির্দেশনা বাতিলের আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলে সরকারেরই সুনাম বাড়বে এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক  ভূমি কমিশন গঠনেরও আহ্বান জানান তিনি।

আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বর্তমান সরকার আদিবাসীদের সাথে প্রতারণা করেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি এখনও সরকার পূরণ করতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধের জন্য যে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে সেটা দিয়ে এখনও পর্যন্ত আদিবাসীদের এক বিন্দু ভূমি সমস্যার সমাধান হয়নি। তিনি এই কমিশনের সংস্কারের আহ্বান জানান এবং সমতল ও পাহাড়ের আদিাবসীদের এক সাথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

তথ্য কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা শুধু ভোটের আগে আদিাবসীদের মনে করেন। ভোট শেষ আদিবাসীদের কথাও তারা ভূলে যান। আদিবাসীদের সংস্কৃতি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দেশের সাংস্কৃতিব বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয় কিন্তু তাদের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়না। তিনি আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সিধু-কানুর বিদ্রোহ একটি মহাবিদ্রোহ। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলেই একে আখ্যায়িত করা যায়। এই বিদ্রোহ ছিল কৃষক, শ্রমিক জনতার সংগ্রাম। সেদিন আদিবাসীরা পরাজিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেই বিদ্রোহ স্বাধীনতার বীজ বুনেছিল। আজকে আদিবাসীদের উপর প্রতিনিয়ত যে অত্যাচার, নিপীড়ণ চলছে তাতে আদিবাসীদের মানবাধিকার বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই সমস্ত অন্যায় অত্যাচার বন্ধে কার্যকর ব্যস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, দেশের অনেক আইনেই আদিবাসীদের স্বীকৃতি আছে। তবুও সরকার নানাভাবে বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নেও সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে এই চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ আদিাবসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ আদিাবসীকে সঠিকভাবে পরিচয় না করিয়ে দিয়ে এই সরকার বেঈমানের কাজ করেছে। অবিলম্বে তিনি আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানান এবং আদিবাসীদের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সম্প্রতি আদিবাসীদের উপর অন্যায় অত্যাচার মারাত্বকভাবে বেড়ে গেছে। অথচ সরকারের এই বিষয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। অবিলেম্ব আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের জন্য ভূমি কমিশন গঠন ও পার্বত্য চুক্তির পূর্ন বান্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, যদি আদিাবসীদের দাবি না মেনে নেওয়া হয় তাহলে সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীরা একসাথে মিলে বৃহত্তর আন্দোন গড়ে তুলবে এবং কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করবে।

সেমিনার শেষে বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ ও মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত আদিবাসী নাটক ‘আলে হঁ দিশৗমলে স্বৗধীনআকাদা’ (আমরাও দেশের স্বাধীনতা এনেছি) মঞ্চস্থ হয়। ঠাকুরগাঁও জেলার কথক নাট্যমঞ্চের আয়োজনে নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন টিটো রেদওয়ান। নাটক শুরুর আগে আলোচনায় বক্তারা বলেন, আদিবাসী জীবন-যাত্রা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য এ দেশের সম্পদ। আজকে আদিবাসী সংস্কৃতি নানা কারণে ধ্বংসের পথে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আদিবাসীদের এই ঐতিহ্যমন্ডিত সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এজন্য সরকারের প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা। বক্তারা আরো বলেন, আজকের এই নাটক আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামেরই অংশ। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীদের যে অবদান তারই জ্বলন্ত উদাহরণ এই নাটক। আজকে ইতিহাসের পাতায় আদিবাসীদের অবহেলা করে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আদিবাসী সংস্কৃতিকে বাচিয়ে রাখতে আদিবাসীদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে এসময় আলোচনায় অংশ নেন নাট্যকার মান্নান হীরা, গণশিল্পী সংস্থার মইনুদ্দিন চিস্তী, অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, মানবাধিকার কর্মী হিরনমিত্র চাকমা, টিটো রেদওয়ান প্রমুখ।

Leave a comment